সম্পদের ধারণা - বাড়িঘর, জমিজমা, টাকাপয়সা, আসবাবপত্র, সরঞ্জাম ইত্যাদিকে সম্পদ হিসেবে আমরা সবাই জানি। এগুলো আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। তবে গৃহ ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিক স্তর থেকে আমরা জেনেছি যে, পরিবারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সম্পদ ব্যবহার করা হয়। আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করার জন্য বিভিন্ন রকম কাজ করতে হয়। আর এ কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য কতকগুলো জিনিসের উপর নির্ভর করতে হয়। এ জিনিসগুলোই হচ্ছে সম্পদ। সম্পদ দিয়ে পরিবারের বিভিন্ন রকম চাহিদা পূরণ করা যায়। অর্থাৎ সম্পদ হচ্ছে চাহিদা পূরণের হাতিয়ার।
মায়িশা ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। তাই সে নিয়মিত স্কুলে যায়। মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সে অনেক বই পড়ে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করে। তার পরীক্ষার ফল সব সময় ভালো হয়। শিক্ষক এবং অভিভাবকগণ আশাবাদী যে, মায়িশা তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
মায়িশার লক্ষ্য অর্জনের পেছনে কাজ করছে তার মেধা, অধ্যাবসায় ও সময়জ্ঞান। এগুলো তার নিজস্ব গুণাবলি, যা তার এক ধরনের সম্পদ। আর তার শিক্ষার আয়োজন করতে ও উপকরণ জোগাতে তার পরিবার ব্যয় করছে টাকাপয়সা, সেগুলোও সম্পদ। সুতরাং যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করার জন্য বিভিন্ন রকম সম্পদ ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা যায়। আমাদের বাড়িঘর, জমিজমা, অর্থ (টাকাপয়সা), বিভিন্ন আসবাব ইত্যাদি প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করা হয়, সেগুলো যেমন সম্পদ; আবার আমাদের বিভিন্ন গুণ যেমন – জ্ঞান, সামর্থ্য, বুদ্ধি, শক্তি ইত্যাদি ব্যবহার করে আমরা কাজ করি, সেগুলোও সম্পদ হিসেবে পরিচিত।
সম্পদের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে
১. সম্পদের উপযোগিতা সকল সম্পদেরই কমবেশি উপযোগিতা রয়েছে। অর্থাৎ সম্পদের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা আছে। তবে সম্পদভেদে এর তারতম্য দেখা যায়। যেমন- অর্থ বা টাকা সম্পদ দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা যায়। তাই অর্থ বা টাকা সম্পদ।
২. সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পদের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো, সকল সম্পদই সীমিত। যেমন-একটা পরিবারের সীমিত আয় বা বাস করার জন্য সীমিত জায়গা ঐ পরিবারের সম্পদের সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে।
৩. সম্পদের ব্যবহার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন সম্পদ একত্রে প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটা কাজ করতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থ, সময়, শক্তি, দক্ষতা ইত্যাদি একাধিক সম্পদের প্রয়োজন হয়। সম্পদের যৌথ প্রয়োগের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়।
৪. সকল সম্পদই ক্ষমতাধীন সম্পদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটা কারও ক্ষমতাধীনে থাকতে
হবে। যদি কোনো জিনিস নিজের মালিকানাধীনে না থাকে বা একে যদি কোনো কাজে না লাগানো যায়, তা হলে তা সম্পদ নয়।
অর্থ, বাড়িঘর, জমিজমা, বাড়ির যাবতীয় আসবাবপত্র, ইত্যাদি সম্পদ যা হস্তান্তর করা যায়। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সামর্থ্য, দক্ষতা, সময়জ্ঞান ইত্যাদি সম্পদ যা কখনো হস্তান্তর করা যায় না। কারণ এগুলো মানুষের নিজস্ব গুণাবলি।
কিছু কিছু সম্পদ আছে যা বৃদ্ধি করার জন্য চর্চা বা অনুশীলনের প্রয়োজন। যেমন- জ্ঞান, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, শক্তি ইত্যাদি।
আয় বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় যেমন- চাকুরি, ব্যবসা ইত্যাদি করে অর্থসম্পদও বাড়ানো যায়।
কাজ ১- তোমার একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো এবং লক্ষ্য অর্জন করতে তুমি কী সম্পদ ব্যবহার করবে তার একটি তালিকা তৈরি করো। কাজ ২- সম্পদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের সম্পদগুলো চিহ্নিত করো। |